• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

মেয়াদ শেষ হওয়ার ৪বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি ২৫০ শয্যা হাসপাতাল

  • ''
  • প্রকাশিত ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

মেয়াদ শেষ হওয়ার ৪বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন ভবনের কার্যক্রম।  এদিকে জায়গা সংকটে পূর্বের স্থানে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

লালমনিরহাট গণপূর্ত বিভাগ ও সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সদর হাসপাতালটির দশতলা ভিতযুক্ত আটতলা ভবনের নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় ঢাকার মিরপুর এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাজিন এন্টারপ্রাইজ (জেভি)।  স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ৩৬ কোটি ৯০ লাখ টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে লালমনিরহাট গণপূর্ত বিভাগ।  চুক্তি অনুযায়ী ১৮ মাসে নির্মাণকাজ সম্পাদনের সময়সীমায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কার্যাদেশ পায় ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট।  একই বছরের ২২ অক্টোবর নির্মাণকাজ শুরু করে ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট শেষ করার কথা ছিল।  কিন্তু ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি।  তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধিদের দাবী নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।  শীঘ্রই শেষ হবে সরঞ্জামাদী বসানো। রংয়ের কাজ করে বুঝিয়ে দেওয়া হবে ভবন।

লালমনিরহাটে নির্মাণাধীন ২৫০ শয্যা আধুনিক হাসপাতালটি কবে চালু হবে? এমন প্রশ্ন এখন হাসপাতালে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং চিকিৎসা নিতে আসা মানুষজনের মুখে মুখে! আর কর্তৃপক্ষ শোনাচ্ছেন শুধু আশার বানী। 

লালমনিরহাট গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, লালমনিরহাট সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পে ১০তলা ভিতযুক্ত ভবনের আটতলা নির্মাণ করা হচ্ছে।  এতে স্যানিটারি, পানি সরবরাহ, আন্তবিভাগ এবং বহির্বিভাগের বৈদ্যুতিক লাইন, ভূগর্ভস্থ জলাধার, পাম্প হাউজ, গভীর নলকূপ, সীমানাপ্রাচীর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, পিএবিএক্স, লিফট, জেনারেটর, সাবস্টেশন বিল্ডিং অ্যান্ড ইকুইপমেন্টস, অগ্নিনির্বাপক, অ্যাপ্রোচ রোড, কার পার্কিং, কম্পাউন্ড লাইটিং অ্যান্ড অরবোরিকালচার করার বিষয়ে সিডিউলে উল্লেখ রয়েছে।  কিন্তু উল্লেখ ছিলো না সার্ভিস বিল্ডিং।  পরে সার্ভিস বিল্ডিং এর কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. আব্দুল বাসেত বলেন, ‘বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে প্রতিদিন এ জেলার প্রায় ৮শ থেকে ১৪শ’ রোগী আসে।  জায়গার অভাবে তাদের সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।  এ ছাড়া অন্তবিভাগে শয্যা ও কেবিন সংকটের কারণে অনেক রোগীকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল থেকে রংপুরে পাঠানো হচ্ছে।  হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ করা হলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।  নির্মাণকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরাও রোগীদের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারছি না।  অনতিবিলম্বে হাসপাতালটির কাজ শেষে করে দ্রুত চালু করার অনুরোধ করেছেন তিনি।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বলছেন, ‘ চিকিৎসাসেবা ভালো পেলেও হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও জায়গা সংকটের কারণে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়।  জেলা সদর হাসপাতালে কত সমস্যা  তা সেখানে ভর্তি না হলে বোঝা যাবে না বলে মন্তব্য করেন তারা'।  স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘হাসপাতালটির নির্মাণকাজ সঠিক সময়ে শেষ করা হয়নি।  এতে রোগীদের পাশাপাশি চিকিৎসা কাজে নিয়োজিতদেরও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’ 
এছাড়াও তাদের অভিযোগ, ‘হাসপাতালের নির্মাণকাজে যে ধরনের সামগ্রী ব্যবহার করার কথা, তা নিশ্চিত করার ব্যাপারেও কর্তৃপক্ষের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।  এসব যেন দেখার কেউই নেই।’

লালমনিরহাট সদর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের  তত্ত্বাবধায়ক ডা: রমজান আলী বলেন, ‘ নতুন হাসপাতালটির কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় যায়গা সংকুলানের কারনে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী, নার্স, চিকিৎসক সবাইকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।  বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবহিত করেছেন বলেও তিনি জানান।

লালমনিরহাট গণপূর্ত উপ বিভাগী প্রকৌশলী মোঃ হাসান মাহমুদ জানান ‘করোনা সংকট মোকাবেলা ও ডিজাইন পরিবর্তনজনিত সমস্যার কারণে ২০১৯ সালের ২১ আগস্টের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।  এছাড়া হাসপাতালের টেন্ডার সিডিউলে সার্ভিস বিল্ডিং ধরা ছিলোনা।  পরে আবারও মন্ত্রণালয় থেকে টেন্ডার দিয়ে মূল ভবনের সাথে সংযোগ রেখে সার্ভিস বিল্ডিং নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।  আর এ কারণে সময় মতো হাসপাতাল ভবন নির্মাণ কাজ বুঝিয়ে দিতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।  তবে তিনি দাবী করে বলেন, চলতি ফেব্রুরারি মাসেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ বুঝিয়ে দিতে পারবে এবং এই মাসেই চালু করা যাবে হাসপাতালের আউটডোর সেবা কার্যক্রম।  পরে লোকবল নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হলে চালু করা যাবে ইনডোর সেবা কার্যক্রম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads